গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “ছাত্রদল ও শিবির এতদিন বাস্তবতার কারণে ক্যাম্পাসে প্রবেশও করতে পারতো না, প্রকাশ্যে পরিচয় দিতেও ভয় পেত। শিবির তো দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ সংগঠন। তারপরও সব বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের এমন জয়—এটা আমার কাছে রহস্যজনক।”
শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘পলিটিক্স ল্যাব: পাবলিক ডায়ালগ’ শীর্ষক সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এই সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস), যার সহযোগিতায় ছিল ফ্রেডরিখ এবার্ট স্টিফটুং (এফইএস)—জার্মানির সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি রাজনৈতিক ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিজিএস সভাপতি জিল্লুর রহমান।
নুর বলেন, “ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর—এই চার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের বিশাল জয় হয়েছে। সবাই জানে, যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জিতেছে, তাদের অনেকেই আসলে শিবিরের সঙ্গে যুক্ত। প্রশ্ন হচ্ছে, উচ্চশিক্ষিত তরুণরা কেন তাদের ভোট দিল?”
তার মতে, শিবিরের এই সাফল্যের পেছনে আছে তাদের ‘কল্যাণভিত্তিক রাজনীতি’। তারা শিক্ষার্থীদের নানা সুবিধা দিয়ে প্রভাব তৈরি করেছে। এমনকি কিছু হাসপাতালে শিবির এমন চুক্তি করেছে যেখানে সদস্যদের পরিবার খুব কম খরচে চিকিৎসা পেতে পারে বলেও দাবি করেন তিনি।
সুবিধার বিনিময়ে ভোট দেওয়ার প্রবণতা নিয়ে নুর বলেন, “আমরা তরুণ প্রজন্মের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখি। কিন্তু যদি তারা ৫০০ বা ১০০০ টাকার বিনিময়ে ভোট দেয়, তাহলে পার্থক্য কোথায়? তখন অযোগ্য নেতৃত্বই সামনে চলে আসে।”
সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, এবং সিজিএস নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী।
তাসনিম জারা বলেন, “আমাদের দেশে দাবি আদায়ে সবসময় রাস্তায় নামতে হয়। এই বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”
সিপিবি সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, “আদর্শিক কারণে আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করিনি। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সেখানে স্থান পায়নি বলে মনে হয়েছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “সংবিধানে গণভোটের কোনো উল্লেখ নেই। তাই এর প্রয়োজনীয়তাও দেখি না। সংস্কার কমিশনগুলো নিয়েও কোনো অগ্রগতি নেই।”
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “টেলিভিশনের সামনে রাজনীতি অন্য রূপ নেয়। গণমাধ্যম না থাকলে রাজনীতি অনেক সহজ হয়ে যেত।”
বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, “ঐকমত্য কমিশন আসলে অনৈক্যের একটি দলিল পেশ করেছে। জাতীয় নির্বাচনের সঠিক পথে না ফেরা পর্যন্ত কোনো সমস্যার সমাধান হবে না।”
এলএনডি/এমআর






