জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান বিতর্কের প্রেক্ষিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “রাষ্ট্র কোনো আবেগ বা অনুভূতির ভিত্তিতে চলে না; রাষ্ট্র পরিচালিত হয় আইন, বিধি ও সংবিধানের কাঠামোর মধ্য দিয়ে।”
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)’ আয়োজিত “চব্বিশের বাংলাদেশে তারুণ্যের ভাবনা: শিক্ষা ও কর্মসংস্থান” শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এই মন্তব্য করেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “অনেকে বলছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা অনুযায়ী মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এখনই আইন বা আদেশ জারি করতে পারেন। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনা কোনো ইমোশনাল ব্যাপার নয়—এটা আইনের বিষয়।”
গত ১৭ আগস্ট স্বাক্ষরিত জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এখনো চূড়ান্ত সুপারিশ দেয়নি। বুধবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশনের বৈঠক হয়, এবং বৃহস্পতিবার আরও একটি পরামর্শসভা হওয়ার কথা রয়েছে।
সংবাদমাধ্যমে পাওয়া প্রাথমিক খসড়া অনুযায়ী, সনদ বাস্তবায়নে একটি বিশেষ আদেশ জারি করার পাশাপাশি গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
জুলাই সনদে যে পাঁচটি রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করেনি, তাদের মধ্যে ন্যাশনাল কনসেনসাস পার্টি (এনসিপি) অন্যতম। বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানান, “এই আদেশ রাষ্ট্রপতি নয়, প্রধান উপদেষ্টাকেই জারি করতে হবে।”
এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, “কেউ কেউ বলছেন, ‘এক্সট্রা কনস্টিটিউশনাল অর্ডার’ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা এটি বাস্তবায়ন করতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে প্রধান উপদেষ্টার কোনো আইনি আদেশ জারি করার ক্ষমতা নেই।”
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী সরকার আইন প্রণয়ন করলে, রাষ্ট্রপতি সংসদ না থাকলে সেই আইন অনুমোদন দেন। তবে সরকার গেজেট বা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে। তাই ‘আদেশ’ বলতে কেউ চাইলে সেটাকে প্রজ্ঞাপন বলা যেতে পারে, কিন্তু তা আইনগত অর্থে আদেশ নয়।”
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, “সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে আইনের ক্রম নির্ধারণ করা আছে—প্রথমে সংবিধান, তারপর জাতীয় আইন, এরপর অধ্যাদেশ ও আদেশ, তারপর বিধি-বিধান ইত্যাদি। অর্থাৎ আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো নির্দেশ জারি করা যায় না।”
তিনি বলেন, “কেউ কেউ বলছেন, বিএনপি গণভোট মেনে নিয়েছে—এটা রাজনৈতিক আনন্দের বিষয় হতে পারে। তবে বাস্তবতা হলো, ঐকমত্য কমিশনের সভায় আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, সনদ স্বাক্ষরের পর জনগণের সম্মতি নেওয়া হবে। কারণ সংবিধানের ৭ নম্বর অনুচ্ছেদে জনগণকেই প্রজাতন্ত্রের মালিক বলা হয়েছে।”
বিএনপি নেতা আরও বলেন, “আমরা জনগণের কাছে যেতে চাই, গণভোটের মাধ্যমে জনগণ ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলুক—এই ছোট ব্যালটেই জনগণের মতামত প্রতিফলিত হবে। এই প্রস্তাবে প্রায় সব রাজনৈতিক দলই একমত হয়েছে, কেবল দুটি দল এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চয়ই সমাধান আসবে।”
এলএনডি/এমআর






