আগামী বছর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে উৎসবমুখর পরিবেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ভালো নির্বাচন করা ছাড়া ইসি’র আর কোনো বিকল্প নেই। দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে এবং গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতেই হবে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, এখন আর পিছু হটার সুযোগ নেই।”
তিনি আরও বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারিতে ঈদের আগেই ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আমরা নির্বাচনের পথে আছি, এখান থেকে আর পিছিয়ে আসব না। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে যা যা করা প্রয়োজন, সবকিছুই আমরা করছি।”
ইসি সদস্যের মতে, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধার এখন একটি “জাতীয় সংকট”। তিনি বলেন, “মানুষের মধ্যে এক ধরনের অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। তাই সকল পক্ষকে পরস্পরের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে—দেশের উন্নয়ন ও জনগণের মঙ্গলের স্বার্থে।”
ভালো নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। সবাই যদি নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য আইন অনুযায়ী পালন করে, তাহলে কোনো সমস্যা হবে না। মানুষ যদি সৎভাবে কাজ করে, আইনও তখন সহজ হয়ে যায়।”
ভোটের পরিবেশ পুনরুদ্ধার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছি যেখানে মানুষ মনে করে, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। তাই এবার ভালো নির্বাচন ছাড়া বিকল্প নেই। জাতি, দেশ ও মানুষের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতেই হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ভালো নির্বাচন মানে কারো পরাজয় নয়। যদি কেউ পরাজিতও হয়, তবু একটি সুন্দর নির্বাচন জাতির জন্য জয় বয়ে আনে। ভালো কাজ করলে কখনো ক্ষতি হয় না, বরং তা ভবিষ্যতে সুফল দেয়।”
চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে ইসি মাছউদ বলেন, “আমরা জানি ফেব্রুয়ারিতে ভোট হবে, তাই প্রস্তুতিও সে অনুযায়ী চলছে। মাঝেমধ্যে সামান্য পরিবর্তন আসতে পারে, তবে আমরা পিছু হটব না। যদি গণভোটের কোনো সিদ্ধান্ত আসে, তখন সময় কিছুটা বাড়তে পারে। তবে জাতীয় নির্বাচনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ।”
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। “সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। তারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে। প্রিজাইডিং অফিসারদেরও বুঝতে হবে, তারা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করছেন, কোনো প্রভাবাধীন অবস্থায় নয়।”
প্রসঙ্গত, আব্দুর রহমানেল মাছউদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৭ সালে এলএলবি (অনার্স) ও ১৯৭৮ সালে এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৩ সালে সহকারী জজ হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে অবসর নেওয়ার আগে তিনি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল-১ এর সদস্য ছিলেন। আইন বিষয়ে তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৮টি।
এলএনডি/এমআর






