থাইল্যান্ডের আট জেলায় মার্শাল ল’ জারি

Liberty News Desk
সংগৃহীত ছবি

দুই দিন ধরে চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জেরে সীমান্তবর্তী আটটি জেলায় মার্শাল ল’ জারি করেছে থাইল্যান্ড। শুক্রবার দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম বেচায়াচাই বলেন, “পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে এই সংঘাত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।”

বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া সংঘর্ষে বিমান হামলা, কামান ও ট্যাংকের ব্যবহার চলছে। এতে এ পর্যন্ত থাই নাগরিক নিহত হয়েছেন অন্তত ১৬ জন, আহত ৪৬ জনেরও বেশি। অন্যদিকে কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একজন বেসামরিক নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন।

থাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিরাপত্তা বিবেচনায় সীমান্ত এলাকা থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষের আওতায় থাকা ওদার মিনচি প্রদেশে ভারী কামানের গোলার শব্দ এখনও শোনা যাচ্ছে।

কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী সামরুং শহর থেকেও সাধারণ মানুষ পরিবার নিয়ে পালাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা প্রো বাক জানান, “আমি সীমান্তের একেবারে কাছাকাছি থাকি। গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে আমরা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একটি বৌদ্ধ মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছি।”

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার চলমান সীমান্ত সংঘর্ষের মধ্যেই আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছে থাই কর্তৃপক্ষ। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিকর্নদেজ বালানকুরা বলেছেন, “কম্বোডিয়া চাইলে আমরা আলোচনায় প্রস্তুত। মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতাতেও আমরা রাজি।” তবে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত নমপেন থেকে তেমন কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে আসিয়ানের বর্তমান সভাপতি দেশ মালয়েশিয়াও এই দ্বন্দ্বে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।

কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত অভিযোগ করে বলেন, “থাইল্যান্ড একবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাহার করেছে। আমরা তাদের প্রকৃত সদিচ্ছা দেখার অপেক্ষায় আছি।”

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, “এই সংঘর্ষ অত্যন্ত গভীরভাবে উদ্বেগজনক। দুই দেশকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।”

দুই দেশের প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে বহু এলাকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছে। ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে সংঘর্ষে ২৮ জন নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতিও আগের মতোই এক জটিল নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

২০১৩ সালে জাতিসংঘের আদালতের রায়ের পর সীমান্ত বিরোধ কিছুটা প্রশমিত হলেও, চলতি বছরের মে মাসে কম্বোডিয়ার এক সেনা নিহত হওয়ার ঘটনার পর পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

থাই সেনাবাহিনীর তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার ছয়টি স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে। এর মধ্যে দুই দেশের একটি করে প্রাচীন মন্দিরের আশপাশেও লড়াই হয়েছে। ভারী অস্ত্র, ট্যাংক ও কামান ব্যবহার করে উভয়পক্ষই একে অপরের ওপর হামলা চালায়। থাইল্যান্ড দাবি করেছে, কম্বোডিয়ার ছোড়া গোলায় তাদের একটি হাসপাতাল ও একটি পেট্রোল স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জবাবে থাই বিমানবাহিনী সীমান্তের ওপারে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে পাল্টা হামলা চালায়।

উভয় দেশই সংঘর্ষ শুরু করার জন্য একে অপরকে দায়ী করছে।

এই উত্তেজনার প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ শুক্রবার রাতে জরুরি বৈঠক ডেকেছে। পর্যটননির্ভর এই দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষ মানবিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এলএনডি/এমআর

For 24/7 breaking news:
🌐 English News – www.libertynewsbd.com
🌐 বাংলা সংবাদ – bangla.libertynewsbd.com
📌 Facebook – www.facebook.com/libertynewsbd/
📌 Facebook (বাংলা) – www.facebook.com/libertynewsbangla/
📌 X (Twitter) – www.x.com/libertynewsbd
📌 Instagram – www.instagram.com/libertynewsbd
📌 YouTube – www.youtube.com/@LibertyNewsBD

TAGGED:
শেয়ার করুন